এসআইআর কি?
বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশে তৎপরতা বাড়ছে, এবং নির্বাচন কমিশনও তা নিয়ে প্রস্তুত। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে বুথ লেভেল অফিসারদের প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণের মূল বিষয় ‘এসআইআর’ বা স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন, যা ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই নিবিড় সমীক্ষার মাধ্যমে ভোটার তালিকা আরও নিখুঁত ও আপডেট করার কাজ চলবে। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে ঘিরে প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে এসআইআর বাস্তবায়নের প্রস্তুতি
বুথ লেভেল অফিসারদের প্রশিক্ষণে নির্বাচন কমিশন জোর দিচ্ছে এসআইআর পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটার তালিকা বিশুদ্ধ করার ওপর। কমিশনের মতে, এবারকার প্রশিক্ষণ আগের তুলনায় অনেক বেশি তথ্যভিত্তিক ও প্রাসঙ্গিক। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কীভাবে ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
সেই প্রক্রিয়ার ওপর। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ করে তোলা হচ্ছে, যাতে ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল ও হালনাগাদ হয়। কমিশন মনে করছে, নির্বাচনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নির্দেশিকার খুঁটিনাটি জানানো হয়েছে
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এসআইআর চলাকালীন বুথ লেভেল অফিসারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। কোনও পক্ষপাতের প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দেশিকায় জরিমানা ও কারাদণ্ডের উল্লেখ রয়েছে, যা এই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব ও কঠোরতা তুলে ধরে।
কমিশনের উদ্দেশ্য, ভোটার তালিকা যেন সঠিক, স্বচ্ছ ও নির্ভুল হয়, এবং কোনওরকম অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। এজন্যই প্রশিক্ষণ এবং তদারকি উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর সতর্ক বার্তা
এসআইআর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমের সভা থেকে বলেন, ভোটার তালিকা থেকে যেন কাউকে অযথা বাদ না দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করা বিএলও-দের দায়িত্ব। তিনি জানান, বিএলও-রা রাজ্য সরকারের কর্মচারী এবং নির্বাচনের আগে-পরে প্রশাসনিক দায়িত্ব তাঁদের ওপরই থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়ায় যেন স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় থাকে, তা গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন। তাঁর মন্তব্যে স্পষ্ট, রাজ্য সরকার এই বিষয়ে সতর্ক এবং কোনওরকম অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।
প্রশিক্ষণে উঠে এসেছে বাস্তব উদাহরণ
প্রেসিডেন্সি ডিভিশনের এক প্রশিক্ষণে সিনিয়র নির্বাচন আধিকারিক এসআইআর-এর গুরুত্ব বোঝাতে বলেন, এক আইএএস অফিসার গত দশ বছরে চারটি জেলায় বদলি হলেও, তার নাম এখনও চারটি জেলাতেই ভোটার তালিকায় রয়েছে। এই মজার অথচ বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরে তিনি দেখান, কীভাবে ভুল তথ্য থেকে যায় এবং এসআইআর পদ্ধতি কতটা জরুরি।
এই ধরনের অসঙ্গতি দূর করতেই এই বিশেষ সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ভোটার তালিকাকে সঠিক ও হালনাগাদ রাখতে এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
ভোটার তালিকা বিশুদ্ধ করার বিশেষ প্রয়াস
এসআইআর-এর প্রধান লক্ষ্য হল ভোটার তালিকাকে নির্ভুল ও বিশুদ্ধ করা। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক বা ভুল নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং প্রকৃত ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের মতে, এতে ভোটার তালিকা আরও নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ হবে।
প্রকৃত ভোটার যেন ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান এবং ভুয়ো নামের কারণে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসআইআর প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়ন ভবিষ্যতের নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।